মা-সরস্বতী - হিন্দু পুরাণ অনুসারে বিদ্যা ও কলার অধিষ্ঠাত্রী দেবী। বীণাপাণি ।বাগদেবী।
কৃতবিদ্য - বিদ্যা অর্জন করেছেন এমন পণ্ডিত। বিদ্বান ।
বঁইচি - কাঁটাযুক্ত একরকম ছোট গাছ ও তার ফল।
রম্ভার কাঁদি - কলার ছড়া ।
কানাচ - ঘরের পেছন দিককার লাগোয়া জায়গা ।
খেজুরমেতি - খেজুর গাছের মাথার কাছের নরম মিষ্টি অংশ ।
কামস্কাকা - প্রকৃত উচ্চারণ কামচাটকা ( Kamchatka) রাশিয়ার অন্তর্গত সাইবেরিয়ার উত্তর পূর্বে অবস্থিত একটি উপদ্বীপ। এর দক্ষিণ-পশ্চিমে ওখটক সাগর ও উত্তর-পূর্বে বেরিং সাগর। উপদ্বীপটি পার্বত্য, তুন্দ্রা ও বনময়। বহু উষ্ণ প্রস্রবণ ও সতেরোটি জীবন্ত আগ্নেয়গিরি আছে এখানে। প্রচুর স্যামন মাছ পাওয়া যায় বলে দ্বীপটি স্যামন মাছের দেশ নামে পরিচিত। রাজধানী শহরের নাম— পেত্রোপাভলোভস্ক।
সাইবেরিয়া - এশিয়ার উত্তরে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত এশিয়ার উত্তরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ ভূভাগ । এশিয়া মহাদেশের এক তৃতীয়াংশ অঞ্চল এর মধ্যে পড়েছে। তুন্দ্রা, সরলবর্গীয় বৃক্ষের অরণ্য, স্তেপ তৃণভূমি ও পৃথিবীর গভীরতম হ্রদ ‘বৈকাল’ এখানে অবস্থিত। পৃথিবীর দীর্ঘতম রেলপথ ট্রান্স-সাইবেরিয়ান চালু হওয়ার পর এখানে বহু শহর গড়ে উঠেছে।
এডেন - লোহিতসাগর ও আরব সাগরের প্রবেশপথে আরব দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত বিখ্যাত বন্দর। সামুদ্রিক লবণ তৈরির জন্য বিখ্যাত ।
পারশিয়া - পারস্য বা ইরান দেশ ।
হুমায়ূন - মোগল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বাবরের পুত্র এবং দ্বিতীয় মোগল সম্রাট । তিনি মোগল সম্রাট আকবরের পিতা ।
তোগলক খাঁ - ভারতবর্ষের ইতিহাসে তোগলক খাঁ নামে কোনো সম্রাট ছিলেন না । ইতিহাসে যে তিনজন বিখ্যাত তোগলক সম্রাটের নাম পাওয়া যায় তাঁরা হলেন : গিয়াসউদ্দিন তোগলক, মুহাম্মদ তোগলক ও ফিরোজ তোগলক।
চল্লিশের কোঠা - এখানে চল্লিশ থেকে ঊনপঞ্চাশ পর্যন্ত বয়সসীমা।
থার্ড ক্লাস - বর্তমান অষ্টম শ্রেণি । সেকালে মাধ্যমিক শিক্ষার শ্রেণি হিসাব করা হতো ওপর থেকে নিচের দিকে। দশম শ্রেণি তখন ছিল ফার্স্ট ক্লাস, নবম শ্রেণি ছিল সেকেন্ড ক্লাস।
প্রত্নতাত্ত্বিক - পুরাতত্ত্ববিদ । প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ, মুদ্রা, লিপি ইত্যাদি থেকে ঐতিহাসিক তথ্য নির্ণয়ের বিদ্যায় পণ্ডিত ব্যক্তি ।
ফোর্থ ক্লাস - এখনকার সপ্তম শ্রেণি ।
সেকেন্ড ক্লাস - এখনকার নবম শ্রেণি ।
গুলি - আফিমের তৈরি একরকম মাদক যা বড়ির মতো গুলি পাকিয়ে ব্যবহার করা হয়।
ওপরের আদালতের হুকুমে - স্রষ্টার নির্দেশে ।
এমনি সুনাম - দুর্নাম বোঝাতে বিদ্রুপ করা হয়েছে।
মালো - এ গল্পে সাপের ওঝা অর্থে ব্যবহৃত। সাধারণত এরা সাপ ধরে, সাপের কামড়ের চিকিৎসা ও সাপের খেলা দেখিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। তবে মালো বলতে এমন একটি সম্প্রদায়কেও বোঝায় যাদের পেশা মাছ ধরা ।
সদ্ব্যয় করিয়াছি - অপব্যয় করেছি বোঝাতে ব্যঙ্গ ভরে বলা হয়েছে।
কঙ্কালসার - অস্থিচর্মসার অবস্থা যেন প্রায় কঙ্কাল ।
যমরাজ - ধর্মরাজ। এখানে মৃত্যু অর্থে।
তিলার্ধ - তিল পরিমাণ সময়ের অর্ধ, মুহূর্তমাত্র।
জনশ্রুতি - লোকপরম্পরায় শোনা কথা, জনরব, লোকশ্রুতি।
সত্যযুগ - হিন্দু পুরাণে বর্ণিত চার যুগের প্রথম যুগ যখন সমাজে অসত্য অন্যায় একেবারেই ছিল না বলে ধারণা করা হয় ।
রসাতলে গেল - অধঃপাতে বা উচ্ছন্নে গেল ।
অকালকুষ্মাণ্ড - অসময়ে ফলেছে এমন কুমড়ো। এখানে অকর্মণ্য ব্যক্তি ।
নিকা - আরবি শব্দ নিকাহ্; বিয়ে। বিধবাবিবাহ বা পুনর্বার বিবাহ।
কলি - হিন্দু পুরাণে বর্ণিত চার যুগের শেষ যুগ। পুরাণ মতে, এ যুগে অন্যায়, অসত্য
ও অধর্মের বাড়াবাড়ি ঘটবে।
বদন দগ্ধ না হয় - মুখ যেন না পোড়ে । সুনাম যেন নষ্ট না হয় ।
নারায়ণের কর্তৃপক্ষেরও চক্ষুলজ্জা হইবে - কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে একদিকে সর্বভারতীয় রাজারা একপক্ষ নিয়ে যুদ্ধ করেছিলেন। শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন নিরস্ত্র রথ-সারথি । সেখানে নারায়ণের নিরপেক্ষ আচরণ ছিল কাপুরুষ-সুলভ। সেই নারায়ণের পথাবলম্বীরাও এরূপ আচরণকে ভীরুতা বলতে লজ্জিত হবে । বাক্যাংশটিতে প্রকৃতপক্ষে ব্যঙ্গ করে বলা হয়েছে যে- ওদের আচরণ এতই বর্বর ছিল যে তা কাপুরুষতার চেয়েও লজ্জাজনক ছিল।
বিলাত প্রভৃতি ম্লেচ্ছদেশে - ইংল্যান্ডসহ ইউরোপীয় দেশসমূহে যেখানে হিন্দু সমাজের আচারধর্মের কোনো বালাই নেই ৷
সনাতন হিন্দু এ কুসংস্কার মানে না - এখানে হিন্দু ধর্মের সংস্কারাচ্ছন্নতাকে তীব্রভাবে ব্যঙ্গ করা হয়েছে।
শ্রাব্য-অশ্রাব্য - শোনার যোগ্য ও অযোগ্য। শ্লীল-অশ্লীল অর্থে ব্যবহৃত ।
দেবী বীণাপাণির বরে সংকীর্ণতা তাহাদের মধ্যে আসিবে কী করিয়া - এখানে ব্যঙ্গ করে বলা হয়েছে— দেবী সরস্বতীর প্রকৃত মান্যতার অভাবে এরা সংকীর্ণতাসর্বস্ব হয়ে পড়েছে।
প্রাতঃস্মরণীয় - প্রাতঃকালে স্মরণ করার যোগ্য। অতি শ্ৰদ্ধেয় ।
সেটা কাশীই বটে - কাশী ভারতের উত্তর প্রদেশে অবস্থিত বিখ্যাত ও সুপ্রাচীন তীর্থক্ষেত্র। সেখানে সাধু-সন্ত-পুণ্যার্থীর সমাবেশ যেমন হয় তেমনি দুশ্চরিত্র লোকজনের আখড়াও সেখানে জমে । মুখোপাধ্যায় মহাশয়ের বিধবা পুত্রবধূকে যেখান থেকে উদ্ধার করে আনা হয়েছিল তা কাশী হলেও তীর্থস্থান ছিল না বরং পতিতালয় বা অনুরূপ কোনো স্থান ছিল এখানে সেই ইঙ্গিতই করা হয়েছে।
বারওয়ারি - অনেকের সমবেত চেষ্টায় যা করা হয়। সর্বজনীন। বারোয়ারি ।
সুদক্ষিণা - পুরোহিতের সম্মানী বা সেলামি ।
ফলাহার - জলযোগ। ফলার।
ধন্য ধন্য পড়িয়া গেল - সকলে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে উঠলেন।
মহত্ত্বের কাহিনি - মহানুভবতার কথা। ব্যঙ্গার্থে নীচতার কাহিনি ।
এন্ট্রান্স - প্রবেশিকা পরীক্ষা। বর্তমান মাধ্যমিক পরীক্ষার সমতুল্য।
ধুচুনি - চাল ইত্যাদি ধোয়ার জন্য বহু ছিদ্রবিশিষ্ট বাঁশের ঝুড়ি।
পঞ্চমুখ - পাঁচ মুখে যে কথা বলে । মুখর ।
পল্লিগ্রামের পুরুষদের সুখ্যাতিতে - ব্যঙ্গ করে সুখ্যাতি বলা হয়েছে। বস্তুত লেখক গ্রামের পুরুষদের সমালোচনা ও নিন্দা করেছেন।
মন্ত্ৰসিদ্ধ - মন্ত্রে সাধনায় সিদ্ধি অর্জন করেছেন এমন যার উচ্চারিত মন্ত্র অব্যর্থভাবে কার্যকর।
মনসা - হিন্দু ধর্মানুসারে সাপের দেবী ।
মন্ত্রের দ্রষ্টা - যিনি প্রথম মন্ত্র লাভ করেন। মন্ত্র সম্পর্কে সাধারণ লোকবিশ্বাস এই যে, মন্ত্র কেউ তৈরি করেন না। তা কোনো ভাগ্যবান দৈববলে পেয়ে থাকেন। যাঁর কাছে প্রথম মন্ত্র আবির্ভূত হয় তিনিই মন্ত্রদ্রষ্টা।
কামাখ্যা - ভারতের আসাম রাজ্যে অবস্থিত প্রাচীন তীর্থস্থান। তান্ত্রিক সাধক ও উপাসকদের তন্ত্রমন্ত্র সাধনার জন্য বিখ্যাত ।
চক্ৰ তুলিয়া - ফণা তুলে ৷
খরিশ গোখরা - খুব বিষাক্ত এক প্রজাতির গোখরা সাপ।
বিষহরির দোহাই - মনসার মন্ত্রশক্তি ।
মৃত্যুঞ্জয় নাম - মৃত্যুঞ্জয় নামের অর্থ— যিনি মৃত্যুকে জয় করেন। বিষকণ্ঠ শিব বা মহেশ্বরের অন্য নাম মৃত্যুঞ্জয় । মৃত্যুঞ্জয়ের বাবা-মা তাদের পুত্রের নাম মৃত্যুঞ্জয় রাখলেও সে মৃত্যুকে জয় করতে পারল না। তার নাম মিথ্যা প্রতিপন্ন হলো । শ্বশুরের দেওয়া মন্ত্রৌষধি - মৃত্যুঞ্জয় তার শ্বশুরের কাছ থেকে অমোঘ মন্ত্রৌষধি পেয়েছিল বলে জনশ্রুতি ছিল ।
ম্যাজিস্ট্রেটের আজ্ঞা- জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ বা হুকুম যা পালন করা বাধ্যতামূলক । ম্যাজিস্ট্রেট চলে গেলেও হুকুম বহাল থাকে।
বাঙালির বিষ - লেখক ব্যঙ্গার্থে বলতে চান, বাঙালির ক্রোধ, বিদ্বেষ ইত্যাদি মুখের বাক্যেই সীমাবদ্ধ এবং ক্ষণস্থায়ী। তা সাপের বিষের মতো অব্যর্থভাবে কার্যকর নয়।
পিণ্ডি - শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে মৃতের উদ্দেশে দেওয়া চালের গোলাকার ডেলা ।
ভুজ্যি উচ্ছ্বগ্য - মৃতের আত্মার সদগতি কামনা করে ব্রাহ্মণকে যে ভোজ্য উৎসর্গ করা হয় তা ।
বহুদর্শী - জ্ঞানী। অনেক দেখেছেন এমন। বহু অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। -
ভূদেববাবু - ভূদেবচন্দ্র মুখোপাধ্যায় (১৮২৫-১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দ) উনিশ শতকের বাংলার নবজাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ । হিন্দু সমাজের নানা কুসংস্কারের বিরুদ্ধে মত ব্যক্ত করে আধুনিক মানস গঠনের লক্ষ্যে তিনি অনেক গ্রন্থ রচনা করেন। ‘পারিবারিক প্রবন্ধ’, ‘সামাজিক প্রবন্ধ, ‘আচার প্রবন্ধ' ইত্যাদি এ বিষয়ে তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ
অতিকায় হস্তী - মহাগজ। Mammoth। হাতির এই প্রজাতি বর্তমান কালের হাতির চেয়ে অনেক বড় ছিল। এই প্রজাতির হাতি প্রাণিজগৎ থেকে লুপ্ত হয়েছে প্রাগৈতিহাসিক যুগে । তাদের অস্তিত্বের চিহ্ন রয়ে গেছে তাদের কঙ্কালে।
আরও দেখুন...